খ্রীষ্টিয়ানের দায়িত্ব

প্রকাশক: বাইবেল স্টুডেন্টস্ ফেলোশীপ অব বাংলাদেশ

মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দলগত বাইবেল পুস্তক

এই পুস্তকের ব্যবহার বিধি

বইটি ব্যবহারের সময় কয়েকটি বিষয় বিশেষ করে গুরুত্ব দিতে হবে- যেন দলীয় আলোচনাটি অংশগ্রহণ মূলক হয়। দলে সকলের সাথে যেন সফল যোগাযোগ হয় এবং একে অন্যের কথা শোনা যায়। দলীয় বাইবেল আলোচনার সময় প্রত্যেক ছাত্রের অবশ্যই পুরাতন ও নূতন নিয়মের পূর্ণাঙ্গ বাইবেল সঙ্গে রাখতে হবে। আরেকটি বিষয় অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন যেন দলীয় আলোচনার সম্পূর্ণ বিষয়টি শেষ করা যায়।

এছাড়াও দলীয় বাইবেল আলোচনার সময় নিম্মলিখিত বিষয়গুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে-

১। আলোচনার জন্য উপস্থিত ভাই-বোনদের কয়েকটি ছোট ছোট দলে বিভক্ত করুন। প্রত্যেক দলে ৫ থেকে ৮ জন হলে ভাল হবে।

২। প্রত্যেক দলের জন্য একজন দলনেতা বা দলনেত্রীকে নিযুক্ত করুন।

৩। প্রার্থনার মাধ্যমে দলের কাজ শুরু করুন।

৪। নির্দিষ্ট বাইবেল অংশটি মনোযোগ সহকারে পাঠ করুন।

৫। ধারাবাহিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর বের করতে চেষ্টা করুন।

৬। দলের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রত্যেক জনকে উত্তর দিতে উৎসাহ ও সুযোগ দিন। উত্তর সন্তোষজনক হয়েছে কিনা এই বিষয়ে প্রত্যেককে মত প্রকাশের সুযোগ করে দিন।

৭। করণীয় বা প্রয়োগ বা চিন্তার জন্য যে সমস্ত বিষয় রয়েছে সেগুলো বিশেষ মনোযোগ সহকারে আলোচনা করুন। বর্তমান সময়ে ও পরিস্থিতিতে এই শিক্ষা কিভাবে কাজে লাগানো যায়, সেদিকে লক্ষ্য করুন এবং পরস্পরকে উৎসাহ দিন।

৮। অবশ্যই পরস্পরের জন্য প্রার্থনা করুন।

৯। সবশেষে প্রার্থনা করে দলীয় আলোচনা শেষ করুন।

১০। প্রয়োজনে দলীয় বাইবেল আলোচনা পদ্ধতি সহায়িকার নির্দেশনা ও পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। এজন্য বাইবেল আলোচনার নেতৃত্ব দেওয়ার পূর্বে এই বইটি পাঠ করা যেতে পারে।

প্রার্থনা করি, যেন দলীয় বাইবেল আলোচনায় এই বই ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার জীবনে ও মণ্ডলীতে ঈশ্বরের অনেক আশীর্বাদ লাভ করতে পারেন।

ভূমিকা

যারা অবগাহন নিতে চান তাদের জন্য এর আগে ‘অবগাহন প্রার্থী’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এইবার যারা প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে ত্রাণক্ল¬র্তারূপে গ্রহণ করেছেন তাদের জন্য ‘খ্রীষ্টীয়ানের দায়িত্ব’ পুস্তিক প্রস্তুত করা হয়েছে।

এই পুস্তিকার মূল বিষয় জন রবিনসন নামে একজন প্রচারক ১৯৬৬ খ্রীষ্টাব্দে লিখে গিয়েছেন। তাঁর লেখা একবার প্রকাশও করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার তাঁর লেখা প্রকাশ করতে গিয়ে আমরা প্রতিটি অধ্যয়নের সাথে কতগুলো আলোচনার প্রশ্ন সংযুক্ত করেছি। আমি আশা ও প্রার্থনা করি, ব্যক্তিগতভাবে ও দলগতভাবে এই বিষয়গুলো বাইবেলের নির্দিষ্ট অংশের সাহায্যে আপনারা আলোচনা করবেন ও ঈশ্বরের আশীর্বাদ গ্রহণ করবেন। শাস্ত্র বলে, “কিন্তু আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্তা যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ ও জ্ঞানে বর্ধিষ্ণু হও” ২ পিতর ৩:১৮ পদ।

আপনার খ্রীষ্টীয় জীবন উজ্জ্বল ও ফলবান হউক এই কামনা করি।

– প্রকাশক।

খ্রীষ্টীয়ানের দায়িত্ব

খ্রীষ্টীয় জীবনের আরম্ভকে আমরা বলতে পারি কোন একটি নৌকা সুনির্দিষ্ট ঘাটের উদ্দেশ্যে পাল তুলে ছেড়ে যাবার মত অথবা কোন এক বিদেশী প্রবাসী লোকের অনেক দিনের পর আত্মীয় স্বজন বা পরিবার পরিজনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার মত। এই দুইটি উদাহরণ খুব সুন্দর তাতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু শাস্ত্রে এর চাইতেও সুন্দর উপমা পাওয়া যায়। যেমন- “নূতন জন্ম”, “মুত্যু হইতে জীবনে প্রবেশ”, “অন্ধকার হইতে জ্যোতিতে প্রবেশ”, “শয়তানের রাজ্য হইতে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ”, “ঈশ্বরের সন্তান হওয়া”। খ্রীষ্টীয় জীবনের এই আরম্ভকে বুঝবার জন্য একটি বিশেষ কথা ব্যবহৃত হয়েছে। পৌল তাঁর ১ করিন্থীয় ৩:১ পদে বলেছেন, “খ্রীষ্ট সম্বন্ধীয় শিশু” এবং পিতর তাঁর ১ম পত্র ২:১-২ পদে বলেছেন, “নবজাত শিশুদের ন্যায় সেই পারমাথির্ক অমিশ্রিত দুগ্ধের লালসা কর যেন তাহার গুণে পরিত্রাণের জন্য বৃদ্ধি পাও।”

যেহেতু সম্প্রতি আপনি প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পরিচয় পেয়েছেন, সেইজন্য আপনার জন্য আধ্যাত্মিক খাদ্য ও খ্রীষ্টীয় জীবনকে সুন্দুরভাবে পরিচালনা করা নিতান্তই প্রয়োজন। আপনাদের জন্যই আমাদের এই ক্ষুদ্র পুস্তিক লেখা; সমস্তই আমাদের অভিজ্ঞতালদ্ধ। তাছাড়াও অন্যান্য অনেক ব্যক্তিকে খ্রীষ্টীয় পথে চলতে ও তাদের পরিচালনা দিতে আমাদের যথেষ্ট সুযোগ হয়েছিল। যার ফলে আজ আমরা আপনাদের জন্যই এই পুস্তিক লিখতে সক্ষম হয়েছি।

অধ্যয়ন ১: নিশ্চয়তা জ্ঞান

প্রায়শই দেখা যায় যে খ্রীষ্টের পরিচয় প্রাপ্তির পরেই শয়তান আমাদের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়। এই সন্দেহ নানাভাবে আমাদের কাছে আসতে পারে। আমি কি সত্যিই পরিত্রাণ লাভ করেছি? এই রকম হাজারো প্রশ্ন আমাদের মনে জাগতে পারে। ফলে মন পরিবর্তনের আনন্দ আমাদের আর থাকতে পারে না। আমরা যখন পরীক্ষায় পতিত হই, মনে নানান কুচিন্তা পোষণ করি অথবা কেউ যখন আমাদের সম্বদ্ধে মন্দ কথা বলে, তখনই পরিত্রাণের আনন্দ ও শান্তি আমাদের মন থেকে দূরীভূত হয়।

কিন্তু সর্বদাই আমাদের মনে রাখতে হবে যে খ্রীষ্টেতে আমাদের পরিত্রাণ সাময়িক নয়, কিন্তু চিরদিনের। এটা আমাদের পরিবর্তনশীল অনুভূতির উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে আমাদের অপরিবর্তনশীল একটা কিছুর উপর। আর সেটাই হচ্ছে ঈশ্বরের বিশ্বস্ততা।

যোহন ৬:৩৭ পদে লেখা আছে, “যে আমার কাছে আসে আমি তাকে কোনমতেই বাইরে ফেলে দেব না,”। এখানে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করে বলেছেন যে, আমরা তাঁর আছে আসলে তিনি আমাদের গ্রহণ করেন। সুতরাং আমরা তাঁর কথা অনুসারে তাঁর কাছে এসে নিশ্চয়ই জানতে পারি, তিনি আমাদের গ্রহণ করেছেন।

 

আমরা তাঁর কথার উপর নির্ভর করি বলে পরিত্রাণের নিশ্চয়তা পাই এবং “আত্মা আপনিও আমাদের আত্মার সহিত সাক্ষ্য দিতেছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান।” (রোমীয় ৮:১৬ পদ)।

আলোচ্য প্রশ্ন:

১। আমাদের জীবনে পরিত্রাণের ফল কি কি (যোহন ৫:২৪, যোহন ১:১২; রোমীয় ৮:১ পদ)?

২। অনন্ত জীবন কে দিতে পারেন? যারা অনন্ত জীবন পেয়েছে তাদের রক্ষাকারী কে (যোহন ১০: ২৮-৩০ পদ)?

৩। একজন লোক অনন্ত জীবন (পরিত্রাণ) পেয়েছে কিনা তা সে কিভাবে জানতে পারবে?

ক) এ সম্পর্কে বাইবেলের সাক্ষ্য কি (১ যোহন ৫:১১-১২ পদ)?

খ) এ সম্পর্কে পবিত্র আত্মার সাক্ষ্য কি (রোমীয় ৮:১৬ পদ)?

গ) এ সম্পর্কে ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা কি সাক্ষ্য বহন করে (২ করিন্থীয় ৫:১৭ পদ)?

৪। ইয়োবের জীবনে কিসের নিশ্চয়তা ছিল (ইয়োব ১৯:২৫-২৬ পদ)?

৫। সাধু পৌল তাঁর জীবনের পরিত্রাণের নিশ্চয়তা সম্পর্কে কি বলেন (২ তীমথিয় ১:১২ পদ)?

৬। আপনার জীবনে পরিত্রাণের নিশ্চয়তা কি কি?

৭। আপনার পরিবারে ও মণ্ডলীতে যাদের জীবনে এখনো পরিত্রাণের নিশ্চয়তা নাই তাদের প্রতি আপনার দায়িত্ব কি কি?

মুখস্ত পদ:

“কেননা আমি সুসমাচার সম্বদ্ধে লজ্জিত নহি, কারণ উহা প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি” – রোমীয় ১:১৬ পদ

অধ্যয়ন ২: প্রার্থনা

প্রার্থনা সম্বদ্ধে আমরা যথেষ্ট কথা বলে থাকি, এমন কি উপদেশ দিয়ে থাকি, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে কাজের বেলায় প্রার্থনা করি না। যে খ্রীষ্টীয়ান প্রার্থনা করে না সে প্রকৃত খ্রীষ্টীয়ান হতে পারে না। যে খ্রীষ্টীয়ান প্রার্থনা করতে অবহেলা করে সে প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করতে পরে না। বাইবেলে প্রার্থনার বিষয় অনেক কিছু লেখা আছে। বাইবেলের মহাপুরুষগণ এবং আদি থেকে আজ পর্যন্ত সে সকল সাধু আছেন। তারা প্রার্থনা ও বিশ্বাস করেছিলেন বলেই ঈশ্বর তাদের দ্বারা মহৎ কার্য সাধন করতে পেরেছেন।

১। প্রার্থনা হল ঈশ্বরের সহিত সহভাগিতা স্থাপন:

পর্বত (অর্থাৎ আপনার ব্যক্তিগত সমস্যা সমস্ত) স্থানান্তর করা নয় কিন্তু ঈশ্বরের সঙ্গে সহভাগিতা স্থাপন করা ও রক্ষা করা ইহাই প্রার্থনার প্রধান উদ্দেশ্য।

আপনি প্রভু যীশুকে আপনার ব্যক্তিগত ত্রাণকর্তা ও প্রভু বলে গ্রহণ করেছেন। সেজন্য আপনি এখন ঈশ্বরকে আপনার স্বর্গস্থ পিতা বলে সম্বোধন করতে পারেন।

প্রার্থনা হল ঈশ্বরের সঙ্গে সহভাগিতা স্থাপন করার উপায় এবং আপনার খ্রীষ্টীয় জীবনে শক্তি ও জয়ের মূল কারণ।

২। প্রার্থনা করার নিয়ম:

প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য প্রার্থনায় রত থাকেন। প্রার্থনায় কেবল আপনি যে কথা বলবেন তা নয়। বরং আপনি ঈশ্বরের আত্মাকে আপনার সঙ্গে কথা বলতে সুযোগ দিবেন যাতে আপনি পবিত্র আত্মায় উত্তপ্ত ও পরিপূর্ণ হউন।

আবার প্রার্থনার সময়ে মন খুলে বাইবেল পাঠ করবেন এতে ঈশ্বর আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। অধিকাংশ লোক হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করে। অপরদিকে কেহ কেহ বসে বসে প্রার্থনা করতে পছন্দ করে। অথবা কেহ কেহ হেঁটে হেঁটে প্রার্থনা করতে ভালবাসেন। আপনি ইচ্ছামত হাঁটু গেড়ে কিম্বা বসে বসে বা হেঁটে হেঁটে প্রার্থনা করতে পারেন।

প্রার্থনার সময়ে আপনি ধীর স্থিরভাবে আপনার ব্যক্তিগত জীবনের সমস্ত বিষয় প্রভুকে জানাবেন। আপনার জীবন দ্বারা যে অন্যান্যদের জীবন আশীর্বাদ যুক্ত হয়, এজন্য নিয়ত প্রার্থনা করুন এবং যাচ্ঞা করুন। সাধু পৌল যেমন লিখেছেন ফিলিপীয় ৪:৬ পদে সর্ব বিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতী দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর।

৩। প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকা:

কোন কিছুই যেন তোমাদের  প্রার্থনা করা থেকে বিরত না করে। প্রার্থনা করার ইচ্ছা না থাকলেও প্রার্থনা করতে থাকেন কেননা যখন প্রার্থনা করার ইচ্ছা না থাকে, তখন বরং প্রার্থনা করার বিশেষ প্রয়োজন। ভোরে যদি আপনার প্রার্থনা করার আকাঙ্খা থাকে, তাহলে রাতে এমন সময় ঘুমাতে যেতে হবে যেন ভোরে আগ্রহের সহিত প্রার্থনার উদ্দেশ্যে উঠতে পারেন। অপর দিকে নির্জন স্থানে যাওয়া ছাড়াও আপনি কাজের মধ্যেও প্রতি মুহূর্তে প্রার্থনায় প্রভুর সান্নিধ্য রাখতে পারেন। প্রভু যীশু আপনার অন্তঃকরণে বাস করেন, ইহা খ্রীষ্টীয় জীবনের ভিত্তিমূল। প্রভুর সহিত যখন আপনি এই প্রকার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন তখন আপনার অনবরত আনন্দের সঙ্গে সহভাগিতায় প্রার্থনা ও প্রশংসা করা উচিত। সুযোগ ও দরকার অনুসারে প্রতি মুহূর্তে হৃদয়ের মধ্যে প্রভুর সঙ্গে আলাপ করতে অভ্যাস করেন। 

আলোচ্য প্রশ্ন:

১। প্রার্থনা কি?

প্রার্থনা হল যীশুর নামে পিতা ঈশ্বরের সঙ্গে আলাপ কর। যেমন:

ক) আরাধনা করা            – গীতসংহিতা ৯৫:৬ পদ

খ) পাপ স্বীকার করা         – গীতসংহিতা ৩২:৫ পদ

গ) ধন্যবাদ ও প্রশংসা করা    – ফিলিপীয় ৪:৬ পদ এবং প্রকাশিত বাক্য ৭:১২ পদ

ঘ) বিনতী জানানো           – ১ তীমথিয় ২:১-২ এবং গীতা ৫:৩ পদ

২। প্রার্থনার ফল কি (যোহন ১৬:২৪, ইব্রীয় ৪:১৬ এবং যাকোব ৫:১৬ পদ)?

প্রার্থনার ফল পাওয়ার নিশ্চয়তা কি (যোহন ১৪:১৩, ১ যোহন ৫:১৪-১৫ পদ)?

৩। আমরা কেন অনেক সময় প্রার্থনার উত্তর পাই না (যিশাইয় ৫৯:১-২ পদ, গীতসংহিতা ৬৬:১৮ পদ)?

৪। কি ধরণের মনোভাব নিয়ে প্রার্থনা করা উচিত (মথি ৬:৬ এবং ২ বংশাবলী ৭:১৪ পদ)?

৫। আমাদের প্রার্থনার সময়ে কে সাহায্য করেন (রোমীয় ৮:২৬ পদ)?

৬। যীশুর জীবন থেকে প্রার্থনার অভ্যাস সম্পর্কে কি শিখতে পারি (মার্ক ১:৩৫ এবং লূক ৬:১২ পদ)?

৭। এলিয় ভাববাদীর প্রার্থনায় আমরা কি দেখতে পাই (যাকোব ৫:১৭-১৮ পদ)?

৮। সাধু পৌলের প্রার্থনার জীবন সম্পর্কে আমরা কি জানতে পারি (১ থিষলনীকীয় ১:২ পদ)?

৯। ক) আপনি কখন, কোথায়, কত সময় ও কাদের সাথে প্রার্থনায় বসেন?

     খ) আপনার প্রার্থনার জীবনকে আরও কিভাবে শক্তিশালী করা যায়? পরস্পর আলোচনা করুন।

১০। যে সমস্ত বিষয় ও ব্যক্তিদের জন্য আপনি প্রার্থনা করেন তার একটি তালিকা প্রস্তুত করুন এবং ব্যক্তিগত বাইবেল পাঠ ও প্রার্থনার সময় এই তালিকা ব্যবহার করুন।

১১। মণ্ডলীতে দলগত বা সমবেত প্রার্থনার প্রয়োজনীয়তা ও ফল কি (মথি ১৮:১৯-২০; প্রেরিত ৪:৩১ পদ)।

আপনার মণ্ডলীতে কি এমন একটি প্রার্থনার দল আছে? যদি না থাকে আজই পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রার্থনার দল গঠন করুন।   

মুখস্ত পদ:

“হে লোক সকল, সতত তাঁহাতেই নির্ভর কর তাঁহারই সম্মুখে তোমাদের মনের কথা ভাঙ্গিয়া বল” গীতসংহিতা ৬২:৮ পদ।

অধ্যয়ন ৩: পরীক্ষা

এই বিষয়ে নূতন খ্রীষ্টীয়ানদের অনেক সময় বাধাবিঘ্নের সৃষ্টি হয়। সাধারণতঃ খ্রীষ্টকে গ্রহণ করার পর যখন হঠাৎ কোন পরীক্ষার সম্মূখীন হন। মনের ইচ্ছায় ও মাংসের অভিলাষে পরীক্ষা আসে। ফলে সেই নবজাত শিশু খ্রীষ্টীয়ানরা নিজেকে অধম ও নিকৃষ্ট বলে মনে করেন। এমন কি সে প্রকৃতপক্ষে খ্রীষ্টীয়ান হয়েছেন কিনা, তাও সন্দেহ করেন। এই বিষয়ে একটু আলোচনা করি:-

১। সকলে পরীক্ষিত হন:

সর্বপ্রথমে আমাদের বুঝতে হবে যে পরীক্ষা পাপ নয়। কিন্তু পাপে পরিণত হয়ে যায় তখনি, যখন আমরা পরীক্ষা মনের মধ্যে পোষণ করে লালসা করি ও কাজে পরিণত করি। বাইবেল বলে ইব্রীয় ৪:১৫ পদ, “খ্রীষ্টও সর্ব বিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হয়েছিলেন বিনা পাপে” অর্থাৎ খ্রীষ্টও পরীক্ষিত হয়েছিলেন, কিন্তু পরীক্ষা বা মন্দ চিন্তা মনের মধ্যে পোষণ করেন নি।

আবার ১ করিন্থীয় ১০:১৩ পদে লেখা আছে, “মনুষ্য যাহা সহ্য করিতে পারে, তাহা ছাড়া অন্য পরীক্ষা তোমাদের প্রতি ঘটে নাই।” অর্থাৎ আমরা যে সমস্ত পরীক্ষা দ্বারা পরীক্ষিত হই, সকলেই সেই একই পরীক্ষা দ্বারা পরীক্ষিত হয়। এমন কি স্বয়ং খ্রীষ্টও সেই পরীক্ষার সম্মূখীন হয়েছিলেন।

আমরা একা এই সমস্ত পরীক্ষার সম্মূখীন হই না। কেননা আমাদের সঙ্গে আরও অনেকেই একই অবস্থায় আছেন এতে আমাদের সাহস বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া স্বয়ং খ্রীষ্টও যিনি প্রতিটি পরীক্ষার উপর জয়লাভ করেছিলেন, তিনি আমাদিগকে পরীক্ষার সময়ে তাঁর নিকট থেকে সাহায্য, শক্তি ও আশীর্বাদ লাভ করতে আহ্বান করেছেন।

সুতরাং, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট নিজে পরীক্ষিত হয়েছিলেন তখন আমরা জোর দিয়ে সাহসের সাথে বলতে পারি যে পরীক্ষা পাপ নয়। পরীক্ষা কতদূর বিপদজনক আমরা খ্রীষ্টীয়ান হওয়াতে তা বুঝতে পারি। এ পরীক্ষা সহ্য বা কাটিয়ে উঠতে পবিত্র আত্মাই আমাদের অন্তঃকরণে এই জ্ঞানদান করে থাকেন। পরীক্ষার বিরুদ্ধে আমাদের মনের মধ্যে যে ঘৃণার ভাব জন্মেছে এজন্য আমরা ঈশ্বরের প্রশংসা করির। একইভাবেই আমরা প্রমাণ পাই যে আমরা ঈশ্বরের সন্তান হয়েছি।

২। ঈশ্বরের শক্তির পরীক্ষা করা:

দ্বিতীয়তঃ পরীক্ষাতে আমরা আমাদের অন্তরে স্থিত ঈশ্বরের শক্তির পরিচয় দিতে পারি এবং সেই পরীক্ষাতে জয়লাভ করে তাঁর বিজয়ের অংশীদার হতে পারি। ১ যোহন ৪:৪ পদে এই কথা বলা হয়েছে, “বৎসেরা, তোমরা ঈশ্বর হইতে এবং উহাদিগকে জয় করিয়াছ; কারণ যিনি তোমাদের মধ্যবর্তী, তিনি জগতের মধ্যবর্তী ব্যক্তি অপেক্ষা মহান”। যে মুহূর্তে পরীক্ষা উপস্থিত হয়, সেই মুহূর্তে ঈশ্বরের অনুগ্রহ, সাহায্য, পবিত্রতা, সাহস, প্রেম ও পরিসমাপ্তির জন্য আমাদের কামনা করা উচিত।

ফলে আমাদের প্রয়োজন অনুসারে ঈশ্বর আমাদের এই সমস্ত প্রদান করে থাকেন। সেজন্য যাকোবের পত্রে লেখা আছে, “হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা যখন নানাবিধ পরীক্ষায় পড়, তখন তাহা সর্বতোভাবে আনন্দের বিষয় জ্ঞান করিও” (যাকোব ১:২ পদ)। বাস্তবিক পক্ষে আমরা ঈশ্বরের সন্তান হয়েও যে পরীক্ষিত হই, ইহা আশ্চর্যের বিষয় নয় বরং এতে আমরা ঈশ্বরের শক্তি প্রমাণ করিবার সুযোগ পেয়ে থাকি।

আলোচ্য প্রশ্ন:

১। মন্দ কাজ করার প্রলোভন বা আকাঙ্খা কোথা থেকে আসে এবং এর পরিণাম কি (যাকোব ১:১৩-১৫ পদ)?

২। পরীক্ষা ও প্রলোভন থেকে জয়লাভ করলে কি ফল পাওয়া যায় (যাকোব ১:১২ পদ)?

৩। কি কি উপায়ে আমরা পরীক্ষা ও প্রলোভন থেকে দূরে থাকতে পারি?

ক) প্রার্থনা দ্বারা (মথি ২৬:৪১ পদ)

খ) অভিলাষ থেকে পলায়ন করে (২ তীমথিয় ২:২২ পদ)।

গ) সমস্ত খারাপ কাজ এড়িয়ে চলার মাধ্যমে (হিতোপদেশ ৪:১৪-১৬ পদ)।

ঘ) শয়তানকে প্রতিরোধ করে (যাকোব ৪:৭ পদ)।

ঙ) বাক্যের মাধ্যমে (ইফিষীয় ৬:১৬-১৭ পদ)।

৪। অব্রাহামের জীবনে কোন্ মহাপরীক্ষা এসেছিল এবং তার ফল কি কি ছিল (আদিপুস্তক ২২:২, ১২ ও ১৬-১৮ পদ)?

৫। দুঃখকষ্টের সময় ইয়োব কোন্ কোন্ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন (ইয়োব ২৩:১০ পদ)?

৬। যীশুর জীবনে কোন সময় পরীক্ষা এসেছিল এবং তিনি কিসের সাহায্যে বিজয়ী হয়েছিলেন (মথি ৪:১-৪, ৭ ও ১০ পদ)?

৭। দৈনন্দিন জীবনে আপনি কি কি পরীক্ষার সম্মূখীন হয়ে থাকেন? এ সমস্ত পরীক্ষা হতে জয়লাভের উপায় কি কি (৩ নং প্রশ্নোত্তরের সাহায্যে গ্রহণ করুন)?

মুখস্ত পদ:

“মনুষ্য যাহা সহ্য করিতে পারে, তাহা ছাড়া অন্য পরীক্ষা তোমাদের প্রতি ঘটে নাই; আর ঈশ্বর বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার।” – ১ করিন্থীয় ১০:১৩ পদ।

অধ্যয়ন ৪: বাইবেল পাঠ করা

বাইবেলের শিক্ষা বুঝা ও হৃদয়াঙ্গম করার আবশ্যকতা পাঠক নিশ্চয় স্বীকার করবেন। বাইবেল বিভিন্ন প্রকারে পাঠ করা যায়। যেমন-ধ্যান করার জন্য, পরিচালনা লাভ করার জন্য, সংশোধিত হবার জন্য এবং জ্ঞান, শক্তি ও শিক্ষা পাবার জন্য পাঠ করা যায়। এর মধ্যে কিন্তু ধ্যান করা ও জ্ঞান লাভ করা প্রধান। ধ্যান হইতে জ্ঞান উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ ধ্যান ও জ্ঞানের মধ্য দিয়ে বাইবেলের সমস্ত কিছু পাওয়া যায়। 

১। বাইবেল ধ্যান করা:

সর্ব প্রথমে বাইবেল ধ্যান করেন। মার্ক লিখিত সুসমাচার সবচেয়ে ছোট সুসমাচার সেজন্য আমি আপনাকে সর্বপ্রথমে ইহা পাঠ ও ধ্যান করতে পরামর্শ দেই। বাইবেল পাঠ করার সময়ে প্রভুকে জ্ঞান দিতে ও আশীর্বাদ করতে অনুরোধ করেন। কেহ কেহ হয়তো যোহন লিখিত সুসমাচার পাঠ করতে ইচ্ছা করেন। ইচ্ছা হলে আপনিও তাই করতে পারেন কেননা যোহন লিখিত সুসমাচারে খ্রীষ্টের জীবনী অন্যভাবে বর্ণিত হয়েছে। এর পরে সাধু পৌল লিখিত ইফিষীয়দের, কলসীয়দের, ফিলিপীয়দের পত্রাবলী পাঠ করতে পারেন। এইগুলির মধ্যে আপনি নিয়ত আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করবেন। দায়ূদের লিখিত অধিকাংশ গীতের পুস্তক গীতসংহিতা মন দিয়ে পাঠ করবেন, কেননা ঈশ্বরের মহাপুরুষদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এর মধ্যে বর্ণিত হয়েছে।  

২। বাইবেল অধ্যয়ন করা:

এর উপর বাইবেল অধ্যয়নও করতে হবে। বাইবেলের মূল বিষয়সমূহ যেমন: ‘প্রেম’, ‘অনুগ্রহ’, ‘শক্তি’ ইত্যাদি অধ্যয়ন করা আবশ্যক। কিম্বা টিকার সাহায্য নিয়ে একটা একটা শাস্ত্রের পুস্তকগুলি আধ্যয়ন করেন। মনে রাখবেন বাইবেল হল-খ্রীষ্টীয় জীবন পরিচালনা করার উপায় ও সম্বল। শাস্ত্রের এমন শক্তি ও অধিকার আছে যা দ্বারা ঈশ্বরের আত্মা আপনার অন্তঃকরণের প্রভাবান্বিত করতে পারেন। হইাতে আপনার দোষ সকল সংশোধিত হয় ও আপনার মনের আঘাত সকল দূরীভূত হয়। ইহাতে আপনার অপরাধ ও ক্রুটি সমস্ত শাসিত হয়। পরীক্ষা, দুঃখ ও দুশ্চিন্তার সময়ে সান্ত¡না দেওয়া হয়। ঈশ্বরের বাক্য প্রতিদিন আপনাকে বল ও শক্তি দিবে ও আপনার সকল সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু প্রতিদিন শাস্ত্র পাঠ এবং শাস্ত্রীয় বাক্যগুলি আপনার ব্যক্তিগত জীবনে পোষণ করে কাজে লাগাতে হবে।

আলোচ্য প্রশ্ন:

১। পবিত্র বাইবেলের বাক্যগুলি কার (২ পিতর ১:২০-২১ পদ)?

২। পবিত্র বাইবেল যদি ঈশ্বরের বাক্য হয় তবে আমাদের এ বাক্য নিয়ে কি কি করা উচিত? বাইবেল পাঠের মাধ্যমে আমাদের খ্রীষ্টীয় জীবনে কি কি উপকার হবে?

ক) যিহোশূয় ১:৮ পদ।

খ) লূক ১১:২৮ পদ।

গ) ২ তীমথিয় ৩:১৫-১৭ পদ।

ঘ) প্রকাশিত বাক্য ১:৩ পদ

ঙ) যোহন ২০:৩১ পদ।

৩। বাইবেল পাঠ সম্পর্কে যাকোবের পরামর্শ কি (যাকোব ১:২২ পদ)?

৪। নিন্মলিখিত প্রশ্নের সাহায্যে আপনি বাইবেল পাঠ করুন। আশা করি আরো বেশী উপকৃত হবেন যেমন:

ক) এই অংশে জানার বিষয় কি কি আছে?

খ) এই অংশে বুঝবার জন্য কি কি আছে?

গ) এই অংশে ব্যক্তিগত জীবনে করণীয় বিষয় কি কি আছে?

৫। গীতসংহিতা ১১৯:৯-১৬ পদ অনুসারে যুবক কি কি উদ্দেশ্যে বাইবেল পাঠ করেন?

৬। সমবেত উপাসনায় বাইবেল পাঠ ও শিক্ষা দান আমাদের কিভাবে দেওয়া উচিত (নহিমিয় ৮: ২, ৮ পদ)?

মুখস্ত পদ:

“যে বাক্যে মন দেয়, সে মঙ্গল পায়; এবং যে সদাপ্রভুতে নির্ভর করে, সে ধন্য” -হিতোপদেশ ১৬:২০ পদ।

অধ্যয়ন ৫: সাক্ষ্য দেওয়া

ঈশ্বরের প্রত্যেক সন্তানদের খ্রীষ্টের পক্ষে সাক্ষ্য বহন করা কর্তব্য এই শিক্ষা স্পষ্টই শাস্ত্রে লেখা আছে। প্রেরিতদের কার্য্য বিবরণীর প্রথম অধ্যায়ে প্রভু যীশু তাঁর শিষ্যদিগকে তাঁর সাক্ষী হতে আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

প্রভুর পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার অন্তত ৩টি উপায় আছে। যেমন: 

১। জীবনের দ্বারা সাক্ষ্য দেওয়া:

সর্ব প্রথমে আমরা যে ঈশ্বরেরই, আমাদের ব্যক্তিগত দৈনন্দিন জীবনে ইহা দেখিয়ে দেয়। আমরা দৈনন্দিন আচার-ব্যবহারে, ব্যবসা হউক, স্কুলে হউক, বাড়ীতে হউক বা যে কোন অবস্থাতেই আমরা যে তাঁর সন্তান ইহা দেখিয়ে দেয়। যেমন:- যারা খ্রীষ্টীয়ান তারা ঠিক সময় মতো কাজে যোগদান করে ও সব অবস্থায় তাদের কথা রক্ষা করে। তারা সব সময় নিজের স্বার্থ পিছনে রেখে পরের বিষয় চিন্তা করে এবং যেখানেই হোক সেখানে অন্যদের সাহায্য করতে প্রস্তুত। এই সমস্ত বিষয়ে আমদের মুখের কথার চেয়ে আচার-ব্যবহার মূল্যবান, ইহা অস্বীকার করা যায় না। সব সময় মনে রাখতে হয় বাহিরের লোক (বা নন-খ্রীষ্টীয়ান) লিখিত খ্রীষ্টের জীবনী পাঠ না করলেও আমাদেরই জীবন ও আচার ব্যবহার দেখে বিচার করে।   

২। বাক্যে সাক্ষ্য দেওয়া:

দ্বিতীয়ত: আমরা আমাদের বাক্যের দ্বারা সাক্ষ্য দিতে পারি। ঈশ্বর তাঁর যে কোন বাধ্য দাসকে তাঁর গৌরবার্থে ব্যবহার করতে প্রস্তুত। আমরা যদি খ্রীষ্টের কথা বলতে ইচ্ছুক হই, তবে প্রভু কথার বলবার সুযোগ ও প্রয়োজনীয় শক্তি দিবেন। ইব্রীয় ১৩:৫ পদে লেখা আছে, ‘আমি কোনক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন মতে তোমাকে ত্যাগ করিব না’। হইা ভিত্তি করে আমরা আরও বলতে পারি ইব্রীয় ১৩:৬ পদে, ‘প্রভু আমার সহায়, আমি ভয় কবির না, মনুষ্য আমাকে কি করিবে?’ আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন যারা এই পর্যন্ত খ্রীষ্টের পরিচয় লাভ করে নাই, তাদের জন্য প্রার্থনা করলে ঈশ্বর তাদের কাছে সাক্ষ্য দিতে সুযোগ দিবেন। তাদের জন্য তাঁর প্রেম ও সহানুভূতি অসীম। সম্ভবত আপনার নিজের মন পরিবর্তনের ফলে ঈশ্বর তাদের কাছে তাঁর প্রেম ও পরিত্রাণ জানিয়ে দেবেন। 

৩। প্রচারের দ্বারা সাক্ষ্য দেওয়া:

বিদেশে ও স্বাদেশে খ্রীষ্টের সুসমাচার শুনেনি এমন অনেক লোক আছে। ঈশ্বরের যে বাণীর মাধ্যমে আপনি আশীর্বাদ ও আলো পেয়েছেন সেই বাণী আপনার এই প্রকার ব্যক্তিদের নিকট উপস্থিত করা কর্তব্য আপনি প্রার্থনা দ্বারা অথবা দানের দ্বারা অথবা সেবা দ্বারা মণ্ডলীর এই দরকারী কার্যের অংশীদার হতে পারেন।

আলোচ্য প্রশ্ন:

১। বিশ্বাসীর কর্তব্য কি (রোমীয় ১০:৯ পদ)?

২। বিশ্বাসী প্রথমে কোথায় ও কি সাক্ষ্য বহন করবে (মার্ক ৫:১৯ পদ)?

৩। সাক্ষ্য দানের প্রধান বিষয় কি (লূক ২৪:৪৬-৪৮ পদ)?

৪। সাক্ষ্য দেওয়া সম্পর্কে যীশুর আদেশ কি (মথি ২৮:১৯-২০, প্রেরিত ১:৮ পদ)?

৫। পিতর ও যোহন কার সাক্ষ্য দিলেন এবং কি বিষয় সাক্ষ্য দিলেন (প্রেরিত ৪:১৯-২০ পদ)?

৬। পৌল কাদের নিকট সাক্ষ্য বহন করতেন? কি উদ্দেশ্যে ও কার সাহায্যে করতেন (প্রেরিত ২৬:২০-২৩ পদ)?

৭। আপনি কি কি উপায় এবং কাদের কাছে সাক্ষ্য বহন করবেন?

৮। আপনার মণ্ডলীর প্রচার কার্যে আপনি কিভাবে সাহায্যে করতে পারেন?

মুখস্ত পদ:

“তোমরা যে আমাকে মনোনীত করিয়াছ, এমন নয়, কিন্তু আমিই তোমাদিগকে মনোনীত করিয়াছি; আর আমি তোমাদিগকে নিযুক্ত করিয়াছি, যেন তোমরা গিয়া ফলবান হও, এবং তোমাদের ফল যেন থাকে;”- যোহন ১৫:১৬ পদ।

অধ্যয়ন ৬: মণ্ডলীর সভ্য হওয়া

অন্যান্য খ্রীষ্টীয়ানদের সঙ্গে এক সহভাগিতায় যোগদান করা আপনার একান্ত কর্তব্য। সম্ভবতঃ আপনি বর্তমান গীর্জাতে যান, কিন্তু গীর্জাতে যোগদান করাই শুধু যথেষ্ট নয়। বরং মণ্ডলীর সভ্য পদও গ্রহণ করা আবশ্যক। মণ্ডলীর সভ্য হওয়ার পরে আপনি ঘনিষ্ঠভাবে অন্য খ্রীষ্টীয়ানদের সঙ্গে সেবা ও শিক্ষার কাজ করতে পারবেন। ইহাতে আপনি খ্রীষ্টীয়ান বিশ্বাসে অধ্যাত্মীক জীবনে আরও ফলবান হয়ে উঠবেন। এই বিষয় প্রার্থনা করে এবং মণ্ডলীর পালকের সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁর কথামত কাজ করেন।

আপনাকে মণ্ডলীর প্রয়োজন আছে; কেননা সর্বদাই মণ্ডলীর সভ্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার। অপরদিকে মণ্ডলীতে আপনারই প্রয়োজন আছে, কেননা মণ্ডলীর দ্বারা খ্রীষ্টেতে আপনার নূতন জীবন পুষ্টিকর হয়ে উঠবে। মনে করেন আপনি খ্রীষ্টীয় জীবনে নবজাত শিশুর মতন। সুতরাং মণ্ডলীর আধ্যাত্মীক খাদ্য গ্রহণ করে আপনি সিদ্ধ পুরুষের অবস্থা পর্যন্ত অগ্রসর হবেন। সেজন্য কৃতজ্ঞ মনে মণ্ডলীর সভ্য হয়ে তাঁর আশীর্বাদ সমস্তই গ্রহণ করুন।

আলোচ্য প্রশ্ন:

১। মণ্ডলী কি?

স্থানীয় মণ্ডলী হল খ্রীষ্ট বিশ্বাসী এক দল লোক যারা নির্দিষ্ট কোন স্থানে একতাবদ্ধ হয়, যেন তারা একত্রে উপাসনা ও আরাধনা করতে পারে এবং পরস্পর শিক্ষা সহভাগিতা ও সহযোগিতা লাভ করতে পারে (প্রেরিত ২:৪১-৪২)।

২। মণ্ডলীর প্রধান (মস্তক) কে (ইফিষীয় ৫:২২-২৩ পদ)? মণ্ডলীর সভ্য/সভ্যা কে বা কারা (ইফিষীয় ২:১৯ পদ)?

৩। যিনি মণ্ডলীর মস্তক অর্থাৎ প্রভু যীশুর সঙ্গে প্রত্যেক সভ্য/সভ্যাাদের সম্পর্ক কিরূপ (যোহন ১৫:৫, ১ করিন্থীয় ১২:১২ ও ২৭ পদ)?

৪। মণ্ডলীতে সভ্য/সভ্যাদের সম্পর্ক কিরূপ হওয়া উচিত (ইফিষীয় ৪:৪, ৩২ পদ)?

৫। মণ্ডলীর সহভাগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা কি (ইব্রীয় ১০:২৪-২৫ পদ)?

৬। মণ্ডলীতে সভ্য/সভ্যাদের পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব কি কি? এই দায়িত্ব পালনের উপায় কি কি (কলসীয় ৩:১৬-১৭, প্রেরিত ২:৪২ পদ)?

৭। মণ্ডলীর সভ্য/সভ্যা হিসেবে মণ্ডলীতে আপনার দায়িত্ব কি কি? এবং সেই দায়িত্ব আপনি কিভাবে পালন করবেন (২ তীমথিয় ৪:২; ১ করিন্থীয় ১৬:২ পদ)?

মুখস্ত পদ:

“কিন্তু তিনি যেমন জ্যোতিতে আছেন, আমরাও যদি তেমনি জ্যোতিতে চলি, তবে পরস্পর আমাদের সহভাগিতা আছে, এবং তাঁহার পুত্র যীশুর রক্ত আমাদিগকে সমস্ত পাপ হইতে শুচি করে।” -১ যোহন ১:৭ পদ।

উপসংহার

শেষে পরামর্শ এই, কোন মতে খ্রীষ্টীয় জীবন যেন আপনার নিকট ভারস্বরূপ না হয়। যদি আপনি হঠাৎ পাপে পতিত হন তবে সঙ্গে সঙ্গে প্রভুর কাছে সেই পাপ স্বীকার করুন। প্রভু প্রতিজ্ঞা করেন ১ যোহন ১:৯ পদে, যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন, এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্মিকতা হইতে শুচি করিবেন।” পাপ স্বীকার করলে পর তিনি তার বিশ্বস্ততা অনুসারে আপনার পাপ ক্ষমা করে দূরীভূত করেছেন, ইহা বিশ্বাস করবেন আপনি যেন জয়ী হন ইহা প্রভুর ইচ্ছা। বার বার পাপে পড়লে প্রভুর পক্ষে আপনার সাক্ষ্য নষ্ট হয় ও প্রভুর অগৌরব হয়। ইফিষীয় পত্রে ১ম অধ্যায়ে ৩ বার লেখা আছে, আমাদের জীবনে যেন “ঈশ্বরের প্রতাপ প্রশংসা হয়।” ইহা আপনার জীবনের জন্য প্রভুর ইচ্ছা ও পরিকল্পনা।

আর একজনের বিরুদ্ধে আপনি কোন না কোন সময় অপরাধ করেছেন, হইা হঠাৎ আপনার মনে পড়তে পারে। (ধরেন অপরধটি আপনার মন পরিবর্তনের আগেও হতে পারে, পরেও হতে পারে।) যদি তাই হয়, তাহলে প্রভুর নিকট প্রার্থনা করে যার বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়েছে, আপনি তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চান। যদি সম্ভব হয়, ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আপনি ক্ষতি পূরণও দিতে পারেন। ইহা বাইবেলের শিক্ষা। মথি ৫:২৩-২৪ পদ দেখুন প্রভুর চরণে আপনি যেন আত্মোৎসর্গ করেন, আপনার জন্য আমাদের একান্ত ইচ্ছা ও প্রার্থনা।